বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শিকড়ের কবিদের কবিতায়
স্মরণ, শ্রদ্ধাঞ্জলি
আমি, স্বয়ং শেখ মুজিব
মাশরুরা লাকী
অনেককাল আগে
আমি চায়ের কাপে মানচিত্র গুলিয়ে স্বাধীনতা পান করতাম,
অগ্নিময় সন্ধ্যায় সার্বভৌমত্ব বন্টন করা হতো বোকা বুদ্ধিজীবীর কলমে,
আমি সেই কলমের জল একত্রিত করতাম টাকিলার গ্লাসে-
বোবা উল্লাসে।
তোমরা আমাকে বিপ্লবী নামে ডাকতে।
আমি ধুলোর বুকে এঁকে চলতাম বারুদের স্ফুলিঙ্গ
আমি বাংলার বুকে একা যেন এক হিমালয়শৃঙ্গ ।
আর রক্তের মিছিলে শ্লোগান ধরতো জীবন্ত শকুন
কখনো শহুরে কামরাঙা-ঝাড়ে
কখনো দূরের গাঁয় আলপথে
অথবা পাহাড়ে
বুনে চলতাম স্বাধীনতার উর্বরতম বীজ
আর জ্বলন্ত অঙ্গারে খুঁজে নিতাম সুখের সাতকাহন
মানচিত্রই তখন আমার হাজারকালের দহন।
তোমরা আমাকে বিদ্রোহী নামে ডাকতে।
অপ্রতিরোধ্য স্বার্থপর বিবেক
আর স্বাধীনতার উজবুক গ্রন্থি নেচে উঠতো সেতারের ঝংকারে
বুকের পচনধরা মাংসপিণ্ডে
ধর্ষিতা মায়ের আহাজারি
নীল বিস্বাদের অন্তরালে ,
আমি স্বপ্নের ক্যানভাসে স্বপ্ন এঁকে বলতাম -
'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো
সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না'_
তোমরা আমাকে বঙ্গবন্ধু বলে ডাকতে।
অথচ আমি চায়ের কাপে মানচিত্র গুলিয়ে স্বাধীনতা পান করতাম
কিষানীর খোলা স্তন ঢেকে দিতাম জাতীয় পতাকায়
আর আমার মেয়ে বন্দি অবস্থায় ছটফট করতো প্রসব যন্ত্রণায়
তখনো তোমাদের রক্ত অশ্রু হয়ে আমার চোখ বেয়ে নামতো ভাঙা চশমার অন্তরালে
কারাগারে - সভ্য ভব্যতার অসভ্য মায়াজালে
অথচ আমি বাংলার, বাংলা আমার
পদ্মার কোলে পালতোলা নায়ে ধীরে চলি অবিরাম,
কিনতেই হবে মায়ের আঁচল রক্তই বুঝি দাম ।
তোমরা আমাকেই স্বাধীনতা নামে ডাকতে।
হ্যা-
আমি সেই লক্ষ বুকের উল্লাসমাখা
তুফান ওঠানো বাণ,
কোটি হাত হয়ে জাগ্রত হওয়া হাজার কবিতা ও গান।
আমিই সত্যি স্বাধীন বাংলা
লাল- সবুজেই অম্লান।
হ্যা-
আমি তোমাদের বুকে
তোমাদের সুখে
শিখা - অনির্বাণ দ্বীপ
চিরায়ত সেই স্বাধীনতা
আমি, স্বয়ং শেখ মুজিব।
কবিতা
মাশরুরা লাকী
গীতল চোখে একুশ
একুশ আমার গীতল চোখে প্রথম অহংকার
শিমুল-পলাশ গেয়ে ওঠে প্রভাতফেরির গান
আমরা সবাই অসাধারণ নির্জলা বদনাম
ভাষাও কাঁদুক পথে
কেউ বা ভীষণ উৎফুল্ল বেদম অগ্নিরথে।
অচেনা এক প্রভাতে ফুল ছুঁড়ে দিয়ে শুনি
একদল তরুণের তাঁতেবোনা ব্যঙ্গ বর্ণমালা
আধুনিকতার ভুলের জয়ধ্বনি
কতো অভিযোগ কতো নালিশ দীর্ঘশ্বাসের ন্যাপথলিন
গন্তব্যের কাছাকাছি হাসে বিজ্ঞের লেজুড়ে পাণ্ডুলিপি।
ক্লান্ত অনুতাপে ঘোষণা দিচ্ছি
হে শহীদ বীর অবিনাশী আত্মার হাহাকারী দল-
আমাদের ক্ষমা করে দিও
রাত্রির নরোম ঠোঁটে ফুটেছিল যে লাল কৃষ্ণচূড়া
ঘাতকের এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে যার অমোঘ সর্বনাশ
তোমাদের সাধের বর্ণমালার মিথ্যা জলাঞ্জলি
ক্ষমা করে দিও আমাদের অভিলাষী এ মাদল।
সেলাইমেশিনে রিফু করি আজ রক্ত-বর্ণমালা
তালি মেরে মেরে মন্দির-মিনার প্রমাণ করি বাংলা আমার মাতৃভাষা
মেখে থাক অবজ্ঞা আর ভুলে ভরা অবহেলা।